অলকনন্দা – এস. এম. রাশেদ রনী
পঞ্জিকার পাতা ঘুরে প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি আসে, আসে একুশ। ইতিহাসের পটভূমি পরিভ্রমণ করে স্মৃতির ডানা মেলে হৃদয়ে শ্রদ্ধার ডালি সাজিয়ে বাঙালি ফিরে যায় বায়ান্নোর এই দিনে। বাঙালির আত্মত্যাগের স্মৃতি বিজরিত একটি দিন, সেইদিন- যেদিন বাঙালি তার আত্মপরিচয় সুরক্ষার জন্য রক্ত দিয়ে প্রথম স্বাক্ষর করেছিল রাজপথে, ভেঙ্গেছিল কার্ফিউ, বিজাতির ছুঁড়ে দেয়া বুলেট ধারণ করেছিল বুকে, নির্ভয়ে বিলিয়ে দিয়েছিল প্রাণ আর আমাদের জন্য সুরক্ষিত করে রেখে গিয়েছিল আমাদের প্রাণের ভাষা – “বাংলা” ।
বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলন ও ভাষা শহীদদের স্মরণে আবদুল গাফফার চৌধুরী রচিত ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ কবিতায় কালাতীত ধ্রুপদী সুরারোপ করেছিলেন শহীদ আলতাফ মাহমুদ, আর এই গানটিই একুশের গান হিসেবে বাঙালি গেয়ে আসছে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করতে। গানটির কথনে আর সুরে অদ্ভুত এক মায়া আর আবেগ লুকিয়ে আছে, একুশের প্রথম প্রহরে বাঙালি যখন গানটি গেয়ে ওঠে, কণ্ঠে সেই অদ্ভুত আবেগ ভারী হয়ে ওঠে আর মায়া ছড়িয়ে যায় বাংলার বাতাসে।
এই একুশের গানে লুকিয়ে আছে ভারি মিষ্টি একটি ফুলের নাম– “অলকনন্দা”, দেখতেও বেশ। স্বচক্ষে কখনো দেখা হয়নি, কিন্তু আজ যখন গানটি শুনছিলাম, গুন গুন করছিলাম তখন হঠাৎ ফুলটি দেখতে কেমন জানতে ইচ্ছে হলো। তারপর ছবি খুঁজে পেলাম গুগলের বদৌলতে।
একুশের গানের তৃতীয় স্তবকে উল্লেখ আছে সুন্দর নামের এই ফুলটির কথা।
“সেদিনও এমনি নীল গগনের বসনে শীতের শেষে
রাত জাগা চাঁদ চুমো খেয়েছিল হেসে;
পথে পথে ফোটে রজনীগন্ধা অলকনন্দা যেন,
এমন সময় ঝড় এলো এক ঝড় এলো খ্যাপা বুনো”
মোদের গরব, মোদের আশা – আ মরি বাংলা ভাষা।
অন্তরের অন্তরস্থল থেকে ভাষা শহীদদের জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা।
আমরা তোমাদের ভুলবো না, ভুলবো না…